ভারতের প্রধান নদ-নদীর সম্পূর্ণ বর্ণনা | ভারতের নদী ব্যবস্থা

বিশেষত ভারতবর্ষ হলো একটি নদীমাতৃক দেশ। ভারতবর্ষের সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষি এবং অর্থনীতি নদনদীগুলির ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। হিমালয়ের বরফ গলা জল থেকে সৃষ্ট নদীগুলি ও দক্ষিণ ভারতের বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদীগুলি শুধুমাত্র ভারতের জলের উৎসই নয়, এগুলি দেশের জীবনরেখা এবং কোটি কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক। নদীগুলি ভারতের জলসেচ, জলবিদ্যুৎ ও পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতে প্রবাহিত নদীগুলিকে উৎস, প্রবাহিত অঞ্চল ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা:

1. উত্তর ভারতের নদনদী বা হিমালয়ের নদনদী,

2. দক্ষিণ ভারতের নদনদী বা উপদ্বীপীয় নদনদী।


indian-rivers-map-in-bengali
ভারতের প্রধান নদ-নদী মানচিত্র

1. হিমালয়ের নদনদী:

হিমালয়ের নদনদী গুলির মধ্যে রয়েছে বিশেষত হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হওয়া নদী গুলি। হিমালয়ের নদী প্রণালী পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা গুলির মধ্যে একটি। এটি আয়তনে প্রায় 3,21,289 বর্গ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত। ভারতে এটির মোট দৈর্ঘ্য 1114 কিমি। হিমালয়ের নদী প্রণালীটিকে তিনটি নদী পালাটিতে ভাগ করা হয়। যথা:

i) সিন্ধু নদী প্রণালী:

​সিন্ধু নদী ব্যবস্থা হলো হিমালয়ের তিনটি প্রধান নদী ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম। এটি সিন্ধু নদ এবং তার প্রধান উপনদীগুলিকে নিয়ে গঠিত।

​◉ সিন্ধু নদের উৎপত্তি:

​সিন্ধু নদের উৎপত্তি হয়েছে তিব্বতের কৈলাস পর্বতমালার বোখারচু হিমবাহের কাছে মানস সরোবর হ্রদের উত্তর দিকে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে।

​◉ সিন্ধু নদের গতিপথ:

সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য হল 2880 কিমি। তিব্বতে এটি 'সিংগি খাম্বান' বা 'সিংহ মুখ' নামে পরিচিত। এখান থেকে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের (বর্তমানে লাদাখ) দমচক এর কাছ থেকে এটি ভারতে প্রবেশ করেছে। ভারতে 709 কিমি প্রবাহিত হয়েছে। লাদাখ ও জাস্কর পর্বতমালার মাঝখান দিয়ে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর লেহ-এর কাছে এর প্রধান উপনদী জাস্কর নদ এর সাথে মিলিত হয়েছে। সিন্ধু নদী লাদাখের বুঞ্জি-তে প্রায় 5200 মিটার গভীর একটি বিশাল গিরিখাত সৃষ্টি করেছে। এরপর এটি চিল্লাস এর কাছে দক্ষিণে বাঁক নিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। দীর্ঘ 2880 কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সিন্ধু নদ শেষে করাচির পূর্বে আরব সাগরে পতিত হয়।

​◉ সিন্ধু নদের প্রধান উপনদী সমূহ:

সিন্ধু নদের পাঁচটি প্রধান উপনদী আছে, যা একত্রে পঞ্চনদ নামে পরিচিত। এগুলি হলো:

  • বিতস্তা বা ঝিলাম: কাশ্মীরের পীরপাঞ্জাল পর্বতমালার ভেরিনাগ ঝর্ণা থেকে ঝিলাম নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এই দৈর্ঘ্য 724 কিমি। ​ঝং-এর কাছে এটি চেনাবের সাথে মিলিত হয়।
  • চন্দ্রভাগা বা চেনাব: সিন্ধুর বৃহত্তম উপনদী হলো চেনাব। এটি হিমাচল প্রদেশে চন্দ্রাভাগা নদীর মিলনে তৈরি হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য 1180 কিমি। এটি পঞ্চনদে মিলিত হয়ে সিন্ধুর সাথে মিলিত হয়েছে।
  • ইরাবতী বা রাভি: হিমাচল প্রদেশের কুল্লু পর্বতে অবস্থিত রোথাং গিরিপথ থেকে রাভী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য 725 কিমি। এটি সারাই সিধু-এর কাছে চেনাবের সাথে মিলিত হয়েছে।
  • বিপাশা বা বিয়াস: হিমাচল প্রদেশের রোথাং গিরিপথ থেকে বিয়াস নদীর উৎপত্তি। এর মোট দৈর্ঘ্য 460 কিমি। পাঞ্জাবের হরিকা-তে এটি সুতলজের সাথে মিলিত হয়েছে।
  • শতদ্রু বা সুতলেজ: তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে রাকাস তাল হ্রদ থেকে সুতলেজ নদীটির উৎপত্তি হয়েছে। এটি সিন্ধুর উপনদীগুলির মধ্যে দীর্ঘতম। এর মোট দৈর্ঘ্য 1450 কিমি। পাঞ্জাবের ফাজিলকা-তে বিয়াসের সাথে মিলিত হওয়ার পর পাকিস্তানে সিন্ধুর সাথে মিলিত হয়েছে।

​◉ সিন্ধু নদের গুরুত্ব:

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদীর পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলির (যথা- সিন্ধু, ঝিলাম, এবং চেনাব নদীর) 80% জল পাকিস্তান ব্যবহার করে। এবং পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলির (যথা- রাবি, বিয়াস, এবং শতদ্রু নদীর) 80% জল প্রধানত ভারত ব্যবহার করে। সিন্ধু ও তার উপনদীগুলি ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে জল সেচের প্রধান উৎস। সুতলজ ও বিয়াসের সংযোগস্থলে অবস্থিত ইন্দিরা গান্ধী খাল রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জল সরবরাহ করে। এছাড়া, এই নদীগুলিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। যেমন শতদ্রু নদীতে নির্মিত ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ।


ii) গঙ্গা নদী প্রণালী:

ভারতের বৃহত্তম নদী ব্যবস্থা হলো গঙ্গা নদী প্রণালী। এটি ভারতের উত্তর ও পূর্বের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই নদী ব্যবস্থা ভারতীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং ইতিহাসে এক কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

​◉ গঙ্গা নদীর উৎপত্তি:

​গঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলার গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়েছে। উৎপত্তিস্থলে এটি ভাগীরথী নামে পরিচিত। এই ভাগীরথী নদী দেবপ্রয়াগে অলকানন্দা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে।

​◉ ​গঙ্গা নদীর গতিপথ:

​গঙ্গা ভারতের চারটি রাজ্য যথাক্রমে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার নামক স্থানে গঙ্গা প্রথম সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। সমভূমিতে প্রবেশ করে এটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে বহু উপনদী গঙ্গার সাথে মিলিত হওয়ায় এর আয়তন ও গভীরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান-এর কাছে গঙ্গা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। প্রথম শাখাটি ভাগীরথী-হুগলী নামে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই শাখাটি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী। ওপর শাখা অর্থাৎ মূল প্রবাহটি পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

গঙ্গার প্রধান উপনদীসমূহ:

​গঙ্গার উপনদীগুলিকে প্রধানত বাম তীরের এবং ডান তীরের উপনদী হিসেবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

  • গঙ্গার বাম তীরের উপনদী গুলি হলো- রামগঙ্গা, গোমতী, কালি, গণ্ডক, কোশি, ঘর্ঘরা। এই নদীগুলি হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়ায় সাধারণত সারাবছরই নদীগুলিতে জল থাকে।
  • গঙ্গার ডান তীরের উপনদী গুলি হলো- যমুনা, শোন ও দামোদর। এই নদীগুলি উপদ্বীপীয় মালভূমি বা অপেক্ষাকৃত নিচু পর্বত থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এগুলির জলের পরিমাণ মৌসুমী বৃষ্টির ওপর বেশি নির্ভরশীল।

​◉ গঙ্গা নদীর গুরুত্ব: 

গঙ্গা নদী দ্বারা সৃষ্ট পলি মাটির কারণে উত্তর ভারতের সমভূমি বিশ্বের অন্যতম উর্বর কৃষি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। গঙ্গা ও তার শাখা নদীগুলি থেকে কাটা বহু খাল উত্তর ভারতের কৃষিতে জীবনদায়ী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, গঙ্গা নদী হলো ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ জলপথ।


iii) ব্রহ্মপুত্র নদী প্রণালী:

ব্রহ্মপুত্র নদী হলো একটি বিশাল আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি তিব্বত, ভারত এবং বাংলাদেশ জুড়ে প্রবাহিত হয়েছে। জলপ্রবাহের দিক থেকে এটি ভারতের বৃহত্তম নদী। এছাড়া, পলি বহন করার ক্ষমতা এবং বৃহৎ নদী দ্বীপ সৃষ্টির জন্যও ব্রহ্মপুত্র নদ বিশেষ বিখ্যাত।

​◉ ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি:

​ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে তিব্বতের কৈলাস পর্বতমালায় অবস্থিত চেমা-য়ুং-দুং হিমবাহ থেকে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫,৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

​◉ ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ:

ব্রহ্মপুত্র নদ ​তিব্বতে হিমালয় পর্বতমালার সমান্তরালে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে এটি ইয়ারলুং সাংপো নামে পরিচিত। হিমালয়ের পূর্বতম প্রান্ত নামচা বারোয়া পর্বতশৃঙ্গের কাছে নদীটি তীব্রভাবে দক্ষিণ দিকে বাঁক নিয়েছে এবং একটি গভীর গিরিখাত তৈরি করে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করছে।

​অরুণাচল প্রদেশে এটি দিয়াং বা সিয়াং নামে পরিচিত। অরুণাচল প্রদেশ থেকে নেমে আসার পর এটি আসামের সমভূমিতে প্রবেশ করে এবং সেখানেই এটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। ​আসামে এর সাথে এর প্রধান দুটি উপনদী দিবংলোহিত মিলিত হয়। এই তিনটি নদীর সম্মিলিত স্রোতটি আসামের সমভূমি জুড়ে প্রবাহিত হয়েছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর অবস্থিত মাজুলি হলো বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ। ধুবড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ দিকে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদী যমুনা নামে পরিচিত। বাংলাদেশে চাঁদপুর-এর কাছে এটি গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা পদ্মা-র সাথে মিলিত হয়েছে। এই সম্মিলিত স্রোতটি আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নামে অবশেষে বিশাল বদ্বীপ গঠন করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।

​◉ ব্রহ্মপুত্র নদের উপনদীসমূহ: 

ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রধান উপনদী গুলি হল: 

  • বাম তীরের উপনদী- দিবং, লোহিত, কপিলি
  • ডান তীরের উপনদী- সুবর্ণসিঁড়ি, মানস, তিস্তা

​◉ ব্রহ্মপুত্র নদের গুরুত্ব:

ব্রহ্মপুত্র নদী নৌ-পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ জলপথ হিসেবে কাজ করে। দ্রুত এবং বিপুল জলপ্রবাহের কারণে এটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিশাল সম্ভাবনা ধারণ করে। গঙ্গা ও সিন্ধুর তুলনায় ব্রহ্মপুত্র পলির পরিমাণ এবং জলপ্রবাহের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তবে এই নদী প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করায় নদীগর্ভকে দ্রুত ভরাট করে তোলে। এর ফলে বর্ষাকালে আসাম ও বাংলাদেশে মারাত্মক বন্যা দেখা দেয়।


2. উপদ্বীপীয় নদনদী:

উপদ্বীপীয় নদী ব্যবস্থা মূলত দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীগুলিকে নিয়ে গঠিত। এদের গতিপথ এবং বৈশিষ্ট্য হিমালয়ের নদীগুলির থেকে আলাদা। বেশিরভাগ নদীই পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং মধ্য ভারতের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন। এই নদীগুলি মূলত বৃষ্টির জলে পুষ্ট। অর্থাৎ এদের জলের পরিমাণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। তাই গ্রীষ্মকালে জলের পরিমাণ কমে যায় এবং কিছু নদী শুকিয়েও যায়। এদেরকে অ-বারোমাসি নদী বলা হয়। এগুলি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং কম খরস্রোতা। এদের উপত্যকাগুলি সুগঠিত ও চওড়া এবং নদীর ক্ষয়কার্য প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এই নদীগুলির মধ্যে বিশেষত পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের জন্য কম উপযুক্ত। উপদ্বীপীয় নদ-নদী গুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা- পূর্ববাহিনী নদী এবং পশ্চিম বাহিনী নদী।


i) পূর্ববাহিনী নদী:

​ভারতের উপদ্বীপীয় নদীর প্রায় ৭৭% বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে এদের অধিকাংশই পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পূর্ব বাহিনী নদী হল:

​a) মহানদী:

  • উৎপত্তি: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়া পর্বতমালার কাছে মহানদীর উৎপত্তি হয়েছে।
  • প্রবাহ: ছত্তিশগড় ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
  • গুরুত্ব: মহানদীর উপর নির্মিত হিরাকুদ বাঁধ হলো ভারতের দীর্ঘতম বাঁধ। এটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের  জন্য নির্মিত হয়েছে।

​b) গোদাবরী:

  • উৎপত্তি: মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কাছে ত্রিম্বক মালভূমি থেকে গোদাবরী নদী উৎপত্তি হয়েছে।
  • পরিচিতি ও প্রবাহ: গোদাবরী উপদ্বীপীয় ভারতের দীর্ঘতম নদী (প্রায় ১৪৬৫ কিমি বিস্তৃত)। তাই এটি 'দক্ষিণের গঙ্গা' নামে পরিচিত। এটি মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

​c) কৃষ্ণা:

  • উৎপত্তি: মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর-এর কাছে কৃষ্ণা নদীর উৎপত্তি।
  • প্রবাহ: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
  • গুরুত্ব: নাগার্জুন সাগর বাঁধ এই নদীর ওপর নির্মিত। এর প্রধান উপনদী হলো তুঙ্গভদ্রা

d) ​কাবেরী:

  • উৎপত্তি: কর্ণাটকের ব্রহ্মগিরি পাহাড়ে কাবেরী নদীর উৎপত্তি।
  • প্রবাহ: কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
  • গুরুত্ব: এই নদী জল সেচ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকেই এর জলবণ্টন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটি এমন একটি নদী যার জলের উৎস দুটি: মৌসুমী বৃষ্টি এবং প্রত্যাবর্তিত মৌসুমী বৃষ্টি।

​ii) পশ্চিমবাহিনী নদী:

​এই নদীগুলি পূর্ববাহিনী নদীর তুলনায় সংখ্যায় কম এবং দৈর্ঘ্যে ছোট।

​a) নর্মদা:

  • উৎপত্তি: মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টক মালভূমি থেকে নর্মদা নদীর উৎপত্তি।
  • প্রবাহ: এটি বিন্ধ্যসাতপুরা পর্বতমালার মধ্যবর্তী গ্রস্থ উপত্যকা দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
  • বিশেষত্ব:  নর্মদা নদী হল উপদ্বীপীয় ভারতের দীর্ঘতম পশ্চিম বাহিনী নদী। এটি খাঁড়ি তৈরি করে আরব সাগরে পতিত হয়েছে। এই নদী কোনো বদ্বীপ তৈরি করেনি। এর ওপর সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মিত।

​b) তাপ্তি বা তাপী:

  • উৎপত্তি: মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার কাছে সাতপুরা পর্বতমালা হল তাপ্তি নদীর উৎপত্তিস্থল।
  • প্রবাহ: এটি নর্মদার সমান্তরালে আর একটি গ্রস্থ উপত্যকা দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
  • গুরুত্ব: সুরাট বন্দর এর মোহনার কাছে অবস্থিত।


​অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবাহিনী নদী

মাহি: মধ্যপ্রদেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে গুজরাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সবরমতী: রাজস্থানের আরাবল্লী পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে গুজরাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।


আরো পড়ুনঃ ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ গুলির বর্ণনা

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post