তাপ ও তাপমাত্রা
পদার্থবিজ্ঞানে তাপ ও তাপমাত্রা দুটি ভিন্ন ধারণা হলেও এরা একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। সহজভাবে বলতে গেলে, তাপ হলো একটি কারণ এবং তাপমাত্রা হলো তার ফলাফল।
• তাপ কী?
তাপ হলো এক প্রকার শক্তি, যা গ্রহণ করলে বস্তু উত্তপ্ত হয় এবং বর্জন করলে বস্তু শীতল হয়। যখন কোনো বস্তুকে তাপ দেওয়া হয়, তখন তার ভেতরের অণুগুলো আরও দ্রুত গতিতে কাঁপতে শুরু করে।
- প্রধান বৈশিষ্ট্য: তাপ সর্বদা হয় উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয়।
- একক: আন্তর্জাতিক একক (SI) হলো জুল (J)। তবে প্রচলিত (CGS) একক হিসেবে ক্যালরি (cal) ব্যবহার করা হয়। এক গ্রাম বিশুদ্ধ জলের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে 1 ক্যালরি বলে। 1 ক্যালোরি = 4.2 জুল।
• তাপমাত্রা কী?
তাপমাত্রা হলো বস্তুর একটি তাপীয় অবস্থা। এটি নির্ধারণ করে বস্তুটি কতটা গরম বা ঠান্ডা। তাপমাত্রা হলো বস্তুর অণুগুলোর গড় গতিশক্তির পরিমাপ। একটি বস্তু অন্য কোন বস্তুকে তাপ দেবে, নাকি অন্য কোন বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করবে তা ঐ বস্তুর তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
- প্রধান বৈশিষ্ট্য: এটি নির্ধারণ করে যে দুটি বস্তুকে একসাথে রাখলে তাপ কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবে।
- একক: সি.জি.এস. পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক হলো ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C) ও ফারেনহাইট (°F)। এবং SI পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক হলো কেলভিন (K)।
তাপ ও তাপমাত্রার পার্থক্য
তাপ ও তাপমাত্রার পার্থক্যগুলি নিচে সহজভাবে দেওয়া হল:
তাপমাত্রা সরাসরি দেখা যায় না, তাই পদার্থের কোনো একটি বিশেষ ধর্মের পরিবর্তন দেখে এটি মাপা হয়। যে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে কোন বস্তুর উষ্ণতা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় তাকে থার্মোমিটার বলে। আর যে থার্মোমিটার গুলিতে উষ্ণতা মাপক পদার্থ হিসেবে পারদ ব্যবহৃত হয় তাকে থার্মোমিটার বলে। এর গায়ে বেশ কয়েকটি দাগ থাকে, যেগুলি উষ্ণতা-নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। তাপ বাড়লে পারদের আয়তন বাড়ে। পারদের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়েই থার্মোমিটারের উষ্ণতা নির্দেশক দাগ গুলির মাধ্যমে তাপমাত্রার পাঠ নেওয়া হয়। তাপমাত্রা প্রকাশের জন্য প্রধানত তিনটি স্কেল ব্যবহার করা হয়: i) সেলসিয়াস স্কেল (°C): এতে বরফের গলনাঙ্ককে 0°এবং জলের স্ফুটনাঙ্ককে 100° ধরা হয়। ii) ফারেনহাইট স্কেল (°F): এতে বরফের গলনাঙ্ককে 32° এবং জলের স্ফুটনাঙ্ককে 212° ধরা হয়। এটি সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা মাপতে ব্যবহৃত হয়। iii) কেলভিন স্কেল (K): এটি বিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক (SI) একক। এর সর্বনিম্ন মান 0 K (পরম শূন্য তাপমাত্রা)। একটি স্কেলের মানকে অন্য স্কেলে রূপান্তর করার জন্য নিচের সমীকরণটি ব্যবহার করা হয়: উষ্ণতা পরিমাপের ক্ষেত্রে পরম শূন্য তাপমাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। 0 K বা -273.15° C তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলোর গতি সম্পূর্ণ থেমে যায়। তাত্ত্বিকভাবে কোনো তাপমাত্রা এর নিচে নামা কখনোই সম্ভব নয়। এটিকেই পরম শূন্য তাপমাত্রা বলে। তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের প্রধান দুটি পরিবর্তন ঘটে: পদার্থের ওপর তাপের সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হলো তাপমাত্রা পরিবর্তন। কোনো বস্তুতে তাপ দিলে তার অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, ফলে বস্তুর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আবার তাপ বর্জন করলে অণুগুলোর গতি কমে যায় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাপ প্রয়োগের ফলে পদার্থ এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য ভৌত অবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে। একে অবস্থার পরিবর্তন বলা হয়। তাপ প্রয়োগ বা নিষ্কাশনের ফলে পদার্থের অবস্থার যে পরিবর্তনগুলি হয়ে থাকে, সেগুলি হল: তাপ সবসময় উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে প্রবাহিত হয়। তাপ প্রবাহিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালনের প্রধান তিনটি পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলি হলো: পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ। নিচে তাপ সঞ্চালনের এই তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: তাপ সঞ্চালনের যে পদ্ধতিতে, পদার্থের অণুগুলি নিজেদের স্থান পরিবর্তন না করে, তাপকে পদার্থের গরম অংশ থেকে ঠান্ডা অংশে প্রবাহিত করে, তাকে পরিবহন পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে অণুগুলো শুধু নিজেদের জায়গায় থেকে স্পন্দিত হয় এবং পাশের অণুকে তাপ শক্তি হস্তান্তর করে। তাপ সঞ্চালনের যে পদ্ধতিতে পদার্থের অণুগুলো নিজেরাই তাপ গ্রহণ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করে, তাকে পরিচলন পদ্ধতি বলে। যখন কোনো তরল বা গ্যাসীয় পদার্থকে নিচ থেকে তাপ দেওয়া হয়, তখন নিচের অণুগুলো হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং উপরের ঠান্ডা ও ভারী অণুগুলো নিচে নেমে আসে। এভাবে একটি চক্রের মাধ্যমে তাপের সঞ্চালন ঘটে। তাপ সঞ্চালনের যে পদ্ধতিতে তাপ কোনো জড় মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যমের সাহায্য না নিয়ে তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গের আকারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যায়, তাকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে। এটি শূন্যস্থানের মধ্য দিয়েও চলাচল করতে পারে। সংজ্ঞা: কোনো পদার্থের একক ভরের তাপমাত্রা 1 ডিগ্রি বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে। সহজ কথায় বলতে গেলে, আপেক্ষিক তাপ হল পদার্থের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য যা নির্দেশ করে ওই পদার্থটি কতটা দ্রুত বা ধীরগতিতে গরম বা ঠান্ডা হবে। একক: 1. তাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী? উত্তর: তাপ হলো এক প্রকার শক্তি যা গ্রহণ করলে বস্তু উত্তপ্ত হয় এবং বর্জন করলে বস্তু শীতল হয়। অন্যদিকে, তাপমাত্রা হলো বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে বস্তুটি কতটা গরম বা ঠান্ডা। সহজভাষায়, তাপ হলো কারণ এবং তাপমাত্রা হলো তার ফলাফল। 2. থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করা হয় কেন? উত্তর: পারদ হলো তাপের খুব ভালো সুপরিবাহী একটি পদার্থ। পারদের প্রসারণ সুষম এবং এটি অনেক উচ্চ তাপমাত্রা পর্যন্ত তরল থাকতে পারে। এছাড়া, পারদ কখনোই থার্মোমিটারের কাছের গায়ে লেগে থাকে না। তাই পারদের মাধ্যমে তাপমাত্রার নির্ভুল পরিমাপ পাওয়া যায়। 3. সুস্থ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত? উত্তর: একজন সুস্থ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো 98.6° ফারেনহাইট বা প্রায় 37° সেলসিয়াস। 4. পরম শূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে? উত্তর: যে তাপমাত্রায় কোনো পদার্থের অণুগুলোর গতি সম্পূর্ণ থেমে যায় এবং তাত্ত্বিকভাবে আয়তন শূন্য হয়ে যায়, তাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলে। এর মান হলো -273.15° সেলসিয়াস বা 0 কেলভিন। 5. রেললাইনে পাতের জোড়ার মুখে ফাঁকা রাখা হয় কেন? উত্তর: রেল লাইনের পাতিগুলির মূল উপাদান হলো লোহা। লোহা হলো এমন একটি কঠিন পদার্থ, যা তাপ পেলে প্রসারিত হয়। গরমের দিনে বা ঘর্ষণের ফলে রেললাইন গরম গরম হয়ে লোহা প্রসারিত হয় এবং পাতের দৈর্ঘ্য কিছুটা বেড়ে যায়। যদি দুটি পাতের জোড়ার মুখে ফাঁকা না রাখা হতো, তবে ওই প্রসারণের চাপে রেললাইন বেঁকে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 6. মেঘলা রাতে গরম বেশি লাগে কেন?
বৈশিষ্ট্য
তাপ
তাপমাত্রা
সংজ্ঞা
তাপ হল এক প্রকার শক্তি।
তাপমাত্রা হল বস্তুর তাপীয় অবস্থা।
কারণ ও ফল
তাপ হলো তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণ।
তাপমাত্রা হলো তাপের ফল।
পরিমাপের যন্ত্র
তাপ মাপা হয় ক্যালরিমিটার যন্ত্র দিয়ে।
তাপমাত্রা মাপা হয় থার্মোমিটার দিয়ে।
নির্ভরশীলতা
তাপ বস্তুর ভর ও উপাদানের ওপর নির্ভর করে।
তাপমাত্রা বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে না।
একক
SI পদ্ধতিতে তাপের একক জুল (J)
SI পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)
তাপমাত্রা পরিমাপ
• থার্মোমিটার:
• তাপমাত্রা পরিমাপের বিভিন্ন স্কেল:
• বিভিন্ন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক:
• পরম শূন্য তাপমাত্রা:
পদার্থের ওপর তাপের প্রভাব
1. তাপমাত্রা পরিবর্তন:
2. অবস্থার পরিবর্তন:
তাপ সঞ্চালন
1. পরিবহন পদ্ধতি
2. পরিচলন পদ্ধতি
3. বিকিরণ পদ্ধতি
আপেক্ষিক তাপ
• আপেক্ষিক তাপ কী?
• বাস্তব জীবনের উদাহরণ:
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
